বাংলা সাহিত্যে ভূতের গল্পের এক আলাদা স্থান আছে। আজকের এই বাংলা ভূতের গল্পটি এক অদ্ভুত শ্মশান ঘাটকে কেন্দ্র করে, যেখানে রাত হলেই নেমে আসে ভয়ংকর এক নিস্তব্ধতা। যারা সাহস করে সেখানে পা দেয়, তাদের জীবন আর আগের মতো থাকে না।
শুরুর কথা
ঘটনাটা ঘটে পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রামের, নাম ধরি চণ্ডীপুর। গ্রামের শেষপ্রান্তে একটা পুরনো শ্মশান ঘাট ছিল—নির্জন, ঝোপঝাড়ে ঘেরা আর দিনের আলো পড়তেই যেন চারপাশটা নেমে যেত ভয়ের অন্ধকারে। গ্রামের লোকেরা সেখানে সূর্যাস্তের পর যেত না, এমনকি কারো মৃত্যু হলেও কেউ চায় না রাতে দাহ করতে।
অভিনেতা অমিতের আগমন
অমিত, একজন উঠতি অভিনেতা, শহর থেকে গ্রামে এসেছিল একটা ডকুমেন্টারি শ্যুট করতে—"বাংলার হারিয়ে যাওয়া রীতি ও কুসংস্কার" বিষয় নিয়ে। শুটিংয়ের অংশ হিসেবে তাকে শ্মশান ঘাটে যেতে হতো। অমিত কুসংস্কারে বিশ্বাস করত না। তার বিশ্বাস ছিল, ভূত-প্রেত সব মানুষের মনের ভয়।
গ্রামের এক বৃদ্ধ, হারাধন কাকা, তাকে সাবধান করেছিল, “বাবু, ওই শ্মশানটা ভালো নয়। বহু বছর আগে এখানে এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়, তার পর থেকেই রাত হলেই নানা অঘটন ঘটে।” কিন্তু অমিত এসব কথা হেসে উড়িয়ে দেয়।
রহস্যের শুরু
শুটিংয়ের তৃতীয় দিন অমিত আর তার ক্যামেরাম্যান বাপন যায় রাত আটটার সময় শ্মশান ঘাটে। জোছনার আলোয় জায়গাটা আরও বেশি রহস্যময় লাগছিল। ক্যামেরা অন করে তারা শ্যুট শুরু করে—তবে কিছুক্ষণ পরেই বাপন বলে, “দাদা, ক্যামেরায় ঝাপসা ছবি আসছে, বারবার ফোকাস হারাচ্ছে।”
হঠাৎ বাতাস ঠান্ডা হয়ে গেল। গাছের ডালগুলো যেন আপনমনে দুলতে লাগল, কোথা থেকে যেন ভেসে এল এক করুণ কান্না—এক নারীর, গভীর বেদনাভরা।
অমিত চমকে উঠল। “কে ওখানে?”—চিৎকার করে উঠল সে। কোনো উত্তর নেই, কেবল কান্না আর ঠান্ডা বাতাসের শব্দ। বাপন কাঁপা গলায় বলল, “দাদা, চলুন! এখান থেকে বেরিয়ে যাই!”
কিন্তু অমিত তখনো বিশ্বাস করতে চায় না। ও বলে, “ওসব কিছু না, হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।”
তখনই তারা দেখতে পেল শ্মশানের চুল্লির ধারে এক সাদা শাড়ি পরা নারী বসে আছে, তার চুল মুখ ঢাকা। নারীর মুখ দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তার বুকফাটা কান্না বাতাস ছিন্ন করে কানে আসছিল।
ভয়ংকর মোড়
অমিত সাহস করে তার দিকে এগিয়ে গেল, আর তখনই সব বাতাস থেমে গেল। এক মুহূর্তের জন্য সব শব্দ স্তব্ধ। সে নারীর মুখটা হঠাৎ ওপরে উঠল। কুৎসিত, পোড়া মুখ—যেন জীবন্ত কেউ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে!
বাপন চিৎকার দিয়ে দৌড় দেয়। অমিত পাথরের মতো দাঁড়িয়ে পড়ে, তার চোখ স্থির সেই নারীর চোখে। এক অদৃশ্য টান যেন তাকে নারীর দিকে টানছে। সে হাত বাড়ায় নারীর দিকে—আর তখন নারীর মুখ বিকৃত হয়ে গর্জে ওঠে, “আমার চিতায় কে এসেছিসss…”
তারপর আর কিছু মনে নেই অমিতের।
পরদিন সকাল
গ্রামের লোকজন ভোরে দেখতে পায়, শ্মশান ঘাটে অমিত অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। তার শরীর ঠান্ডা, কিন্তু জীবিত। ডাক্তার বলে সে মানসিক আঘাত পেয়েছে—তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না। সে শুধু একই কথা বলছে, “আমি চিতায় যাইনি... আমি চিতায় যাইনি...”
বাপন আর কখনও গ্রামে ফেরেনি। সে পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিল, সেই রাতের অভিজ্ঞতা তাকে আজও তাড়া করে বেড়ায়।
হারাধন কাকার ব্যাখ্যা
গ্রামের বৃদ্ধ হারাধন কাকা জানায়, সেই নারীর নাম ছিল কুন্তলা। সমাজের চাপে একদিন সে শ্মশানে আত্মাহুতি দেয়। বলা হয়, তার আত্মা আজও খুঁজে ফেরে তার যন্ত্রণার প্রতিশোধ। কেউ যদি রাতে তার চুল্লির ধারে আসে, তাকে সে ভুলিয়ে নিজের যন্ত্রণার অংশ বানায়।
শেষ কথা – শ্মশান ঘাটের ভয়ংকর ইতিহাস
আজও চণ্ডীপুরের সেই শ্মশান ঘাটে কেউ রাতে পা দেয় না। গ্রামের ছেলেমেয়েরা বড় হয় এই গল্প শুনে, আর শহরের লোকেরা আসে ভিডিও করতে—কিন্তু কেউ ফিরে যায় না আগের মতো। এই বাংলা ভূতের গল্প শুধু একটি গল্প নয়—এটি একটি সতর্কবার্তা।
আপনি কি সাহসী? আপনি কি নিজে গিয়ে দেখতে চান সেই শ্মশান ঘাট? মনে রাখবেন, প্রতিটি শ্মশানের আছে তার নিজস্ব ইতিহাস, আর কিছু ইতিহাস না জানা থাকলেই ভালো।
বাংলা ভূতের গল্প,ভৌতিক গল্প, শ্মশান ঘাট, ভূতের অভিজ্ঞতা, ভূতের গল্প বাংলা, ভয়ংকর বাংলা গল্প, The Mysterious Night at the Cremation Ground
0 comments:
Thanks
MoviOrbit